প্যাটেন্ট মামলা নিষ্পত্তিতে একমত হুয়াওয়ে ও ভেরাইজন

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেরাইজন কমিউনিকেশনসের সঙ্গে প্যাটেন্ট লঙ্ঘন-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তিতে একমত হয়েছে চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে টেকনোলজিস। উভয় কোম্পানির পক্ষ থেকেই সম্প্রতি তথ্যটি নিশ্চিত হয়েছে। খবর রয়টার্স।

গত সপ্তাহে আদালতে দুটি মামলা উত্থাপিত হওয়ার পর কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে আপসরফায় পৌঁছানোর ব্যাপারে একমত হয়। গত রোববার শেষবেলায় টেক্সাসের আদালতে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন জানায় হুয়াওয়ে ও ভেরাইজন। তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট নিজেদের মধ্যে আপসে সমাধানের পথ খুঁজছে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভেরাইজনের বিরুদ্ধে হুয়াওয়ে মামলা করে যে মার্কিন কোম্পানিটি হুয়াওয়ের বেশ কয়েকটি প্যাটেন্ট লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, ডাউনলোড সিকিউরিটি ও ভিডিও সিকিউরিটি। ভেরাইজনের কাছে বড় অংকের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি রয়্যালটি পেমেন্ট দাবি করে। চলতি সপ্তাহে সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে ভেরাইজন জানায়, হুয়াওয়ের সঙ্গে প্যাটেন্ট মামলা নিষ্পত্তিতে পৌঁছতে পেরে আমরা আনন্দিত।

এদিকে এক বিবৃতিতে হুয়াওয়ে জানায়, আমরা আনন্দিত যে ভেরাইজন ও হুয়াওয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পেরেছে। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তা একান্ত গোপনীয়। হুয়াওয়ে জানায়, বিশ্বব্যাপী তাদের প্যাটেন্ট সংখ্যা এক লাখের বেশি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ১০ হাজার। ২০১৯ সালের জুনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হুয়াওয়ের ২৫০টিরও বেশি প্যাটেন্টের জন্য লাইসেন্সিং ফি দিতে হবে ভেরাইজনকে। এমনকি হুয়াওয়ে তখন ভেরাইজনের কাছে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল।

প্যাটেন্ট নিয়ে গত বছর থেকেই হুয়াওয়ে ও ভেরাইজনের মধ্যে আইনি লড়াই চলছিল। এমনকি হুয়াওয়ের মামলার কয়েকদিন পরই ভেরাইজন পাল্টা প্যাটেন্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে চীনা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।

২০২০ সালে মামলার আরজিতে হুয়াওয়ে জানিয়েছিল, ভেরাইজনের কাছে আমাদের সরল প্রত্যাশা গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) আমরা যে বিনিয়োগ করেছি, তার প্রতি সম্মান জানাক তারা। হয় তারা আমাদের প্যাটেন্ট ব্যবহারের জন্য অর্থ প্রদান করুক কিংবা তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুক।

ভেরাইজনের সঙ্গে হুয়াওয়ের বিরোধ নিষ্পত্তিকে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টটির জন্য বড় জয় হিসেবে দেখছে এনগ্যাজেট। ভেরাইজন মালিকানাধীন এ সাইটটি এক প্রতিবেদনে লেখে, প্যাটেন্ট পোর্টফোলিও মানিটাইজ করতে চলতি বছরের শুরুতে যে আগ্রাসী পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল, তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে এ বিরোধ নিষ্পত্তিতে। ভেরাইজনের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে হুয়াওয়ে যেমন ফলাফল কামনা করছিল তা-ই হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ব্যাহত হলেও নিজেদের হাতে থাকা হাজারো প্যাটেন্টের লাইসেন্সিং ফির মাধ্যমে অর্থ কামাচ্ছে হুয়াওয়ে। বিশ্বে ফাইভজি-সংক্রান্ত সর্বোচ্চ প্যাটেন্ট এখন হুয়াওয়ের দখলে। হুয়াওয়ের প্রাক্কলন, ২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ নিজেদের লাইসেন্সিং কৌশল কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ১৩০ কোটি ডলার আয় করতে যাচ্ছে তারা।

গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে দাঁড়িয়েছে হুয়াওয়ে। জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাত তুলে ২০১৯ সালে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে ওয়াশিংটন।

ফেসবুক-টুইটারকে মানুষের জন্য হুমকি মনে করছেন কেন বিজ্ঞানীরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের যোগাযোগের ধরনে যে বড় পরিবর্তন এনেছে, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা আগের চেয়ে যেমন দ্রুত তথ্য পাচ্ছি, তেমনি সবার সঙ্গে ভাগাভাগিও করতে পারছি। তবে তথ্যের প্রবাহ নির্ধারিত হচ্ছে এমন অ্যালগরিদমের সাহায্যে, যা বেশির ভাগ মানুষই বোঝে না।

সমাজবিজ্ঞানী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের কেউ কেউ অবশ্য গণতন্ত্র, মানসিক স্বাস্থ্য ও পারস্পরিক সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব দিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তবে জীববিজ্ঞানী কিংবা বাস্তুবিদেরা (ইকোলজিস্ট) এ নিয়ে তেমন মুখ খোলেননি। হয়তো প্রয়োজন বোধ করেননি। তবে নতুন গবেষণাপত্রে সেটার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞান জার্নাল প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসে (পিএনএএস) প্রকাশিত নতুন এক গবেষণাপত্রে ১৭ জন গবেষক মানবসম্প্রদায়ের ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সার্বিক প্রভাব নিয়ে লিখেছেন। জলবায়ুবিজ্ঞান থেকে দর্শন—এই গবেষকদের কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত।

‘স্টুয়ার্ডশিপ অব গ্লোবাল কালেকটিভ বিহেভার’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে তাঁরা বলেছেন, সমাজে প্রযুক্তির বৃহত্তর প্রভাবকে ‘ক্রাইসিস ডিসিপ্লিন’ হিসেবে গণ্য করতে হবে। ক্রাইসিস ডিসিপ্লিনে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানীরা এককাট্টা হয়ে জরুরি ভিত্তিতে কোনো সমস্যার সমাধান দেন। যেমন বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় জীববিজ্ঞানীরা যেভাবে কাজ করেন, কিংবা বৈশ্বিক উষ্ণতা থামাতে জলবায়ু নিয়ে গবেষকদের কাজ এখানে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

গবেষণাপত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে, নতুন প্রযুক্তির ‘সমন্বিত আচরণগত প্রভাব’ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার জ্ঞানের অভাব গণতন্ত্র এবং বিজ্ঞানবিষয়ক উন্নতির জন্য বিপজ্জনক। যেমন সেখানে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান করোনাকালে ভুয়া তথ্যের প্রসার রোধে হিমশিম খাচ্ছে। আর তাতে মাস্ক এবং ভ্যাকসিন সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলা সম্ভব হয়নি।

গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, এই বিষয়গুলো যদি এমন অজানা এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে হয়তো নতুন প্রযুক্তির কালো দিক দেখতে হবে। যা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, রোগ, সহিংস উগ্রবাদ, দুর্ভিক্ষ, বর্ণবৈষম্য এবং যুদ্ধের মতো ব্যাপারগুলোতে মদদ জোগাবে।

এমন বিস্তৃত খাতের গবেষকদের প্রযুক্তির ব্যাপারে এককাট্টা সচরাচর হতে দেখায় যায় না। তাঁদের সম্মিলিত গবেষণাপত্রের উদ্যোগই বলছে, তাঁরা কতটা উদ্বিগ্ন। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট রিকোড গবেষণাপত্রটির মূল লেখক জো বাক-কোলম্যান এবং সহলেখক কার্ল বার্গস্ট্রমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাঁরা দুজনই এই নতুন প্রযুক্তি বলতে মূলত ফেসবুক-টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবকে বুঝিয়েছেন বলে জানিয়েছে।

Cart
Your cart is currently empty.