ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য সমূহ..

সহজ অর্থে ডিজিটাল প্রযুক্তি (ইন্টারনেট সেবা) ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করা হয় তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। বর্তমান সময়ে টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র থেকে বেশি ব্যাবহৃত মাধ্যম হয়ে উঠছে স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। আর এই দুটি জিনিসের অন্যতম প্রাণশক্তি হল ইন্টারনেট। মূলত ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে দিন দিন ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে উঠছে। মানুষ যত বেশি প্রযুক্তির বাবহার শুরু করেছে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রও তত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য সমূহ এবার চলুন জেনে নেই ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে যে সব পার্থক্য রয়েছে সে সব বিষয় সমূহ নিয়ে
 
১) সাধারণত টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, বিভিন্ন সাইজের ব্যানার, ফেসটুন, লিফলেট, ইত্যাদির মাধ্যমে পন্য প্রচার প্রচারনাটা হলো ট্রাডিশনাল মার্কেটিং। অন্যদিকে ডিজিটাল উপায়ে পণ্যর বিজ্ঞাপন যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, সহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া ও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে পন্যর প্রচার প্রচারনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
 
২) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এ টাকার ব্যায়ের পরিমান অনেক বেশী এবং আশানুরূপ ফলাফল অনেক কম। পক্ষান্তরে ডিজিটাল মার্কেটিং এ টাকার ব্যায়ের পরিমানের তুলনায় ফলাফল অনেক বেশী।
৩) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের এর ফলাফল হিসেবে এর কোন পরিপূর্ণ ডাটা পাওয়া যায় না। যা কিনা ডিজিটাল মার্কেটিং প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে এ সকল ডাটা পাওয়া সম্ভব।
৪) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর দ্বারা টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে বিজ্ঞাপন প্রচার সম্ভব হয় না কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে টার্গেটেড কাস্টমারের নিকট বিজ্ঞাপন প্রচার সম্ভব।
৫) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যম অনেক কম এবং দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অন্য দিকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যম অনেক বেশি এবং দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 
৬) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন ডলারের বিজনেসে পরিণত হতে অনেক দিন সময় লাগবে। পক্ষান্তরে ডিজিটাল মার্কেটিং (ই-কমার্স বিজিনেসের) মাধ্যমে
 
বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন ডলারের বিজনেসে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় Pathao –Transport Company এর কথা। তারা মার্চ, ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করেছিল শুধু একটা আপসের মাধ্যমে এবং তারা তাদের সার্ভিসের প্রধান প্রচার প্রচারনা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া সাইটের মাদ্ধমে। যার ফলে এখন তাদের মার্কেট ভ্যালু প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ও বেশি। এছাড়া বিদেশি কোম্পানির মধ্যে Ali Express – Online Retail Service অন্যতম উদাহরণ। পরিশেষে আপনি যদি নিজে কোন উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে আপনি সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং (ই-কমার্স বিজিনেসের ) মাধ্যমে বর্তমানে আপনার পন্য বা সেবার প্রচার প্রচারনা করতে পারেন। যা আপনার বিজিনেস প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

নিজেকে সব সময়ে পজিটিভ রাখতে প্রতিদিন এই ৫টি কাজ করুন

একটিসফল দিন কাটানোর জন্য সারাদিন মনে একটি ইতিবাচক বা পজিটিভ ভাব ধরে রাখাটা খুবই জরুরী।  আপনার মন যদি নেগেটিভ অবস্থায় থাকে তাহলে মানসিক চাপ, দু:খ, দ্বিধা, ভীতি – ইত্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হবেন।  আর তাতে করে আপনার দিনের কাজেও তার প্রভাব পড়বে। দিনের পর দিন এভাবে কাটলে সপ্তাহ, বছর এমনকি সারাজীবনই আপনাকে হয়তো এই নেতিবাচকতার ফাঁদে বন্দী হয়ে অস্বস্তিকর ও অসফল অবস্থায় কাটাতে হবে।  তাই এর থেকে বের হয়ে এসে মনে সব সময়ে ইতিবাচক ভাব ধরে রাখার কোনও বিকল্প নেই।

একথা সত্যি যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নেতিবাচকতা সব সময়েই ঘিরে রাখে।  প্রতিদিনই কোনও না কোনও প্রকারের নেতিবাচকতা আমাদের জাপটে ধরে, এবং বেশিরভাগ মানুষই তার কাছে নতিস্বীকার করে।  কিন্তু আমরা অনেক সময়েই ভুলে যাই, নেতিবাচকতা বা Negativity এর পাশাপাশি ইতিবাচকতা বা Positivity ও আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকে।  কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে আমরা প্রথমটিকে জিততে দেই, যার ফলে আমাদের দিনগুলো মনের মত করে কাটেনা।  আর এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নেতিবাচকতার সাথে লড়াই করে নিজের মনকে সব সময়ে ইতিবাচকতার দিকে ঝুঁকিয়ে রাখা।

কিন্তু লড়াই তো আর খালি হাতে করা যায় না। সেইজন্য কিছু রসদ লাগে।  আজকে আপনাকে সেই রসদের সন্ধানই দেব। আপনার হাতে আজ তুলে দেব সেই অব্যর্থ অস্ত্র, যা ব্যবহার করে আপনি প্রতিদিনই যাবতীয় নেতিবাচকতাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেবেন।  অস্ত্রগুলো আর কিছুই নয়, পাঁচটি কাজ যা প্রতিদিন করলে আপনি আপনার মনকে সারাদিনের জন্য পজিটিভ রাখতে পারবেন।

১. শরীরের পাশাপাশি আত্মারও যত্ন নিন:-মন ভাল রাখার জন্য শরীরের যত্নের কোনও বিকল্প নেই।  সারাদিন মাথা ঠান্ডা ফ্রেশ রাখার জন্য সকাল থেকেই শরীরের জন্য যেটা ভাল, সেটা করুন।  রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমান ও সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন। পুষ্টিকর ও ভাল নাস্তা করুন। অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।  এসব খাবার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, ফলে আপনার মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। হাল্কা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন, এতে করে শরীরের পাশাপাশি মনও ভাল থাকে।

শরীরের পাশাপাশি আত্মার যত্ন নেয়াটাও জরুরী।  এখানে আত্মা বলতে আপনার মনের আধ্যাত্নিক অবস্থা ও অবচেতন মনকে বোঝানো হচ্ছে।  প্রতিদিন সকালে উঠেই প্রথমে প্রার্থনা, ইয়োগা অথবা মেডিটেশন করুন। এতে আপনার মনের অস্থিরতা দূর হয়ে যাবে, মন সারাদিন প্রশান্ত ও পজিটিভ থাকবে।  প্রথমেই আপনার এগুলো ৩০ মিনিট বা এক ঘন্টা করে না করলেও চলবে – পাঁচ/দশ মিনিট করে শুরু করুন। কিন্তু প্রতিদিনই করুন। প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা, ধ্যান, ইয়োগা ইত্যাদি করলে আপনার মন থেকে রাগ, অস্থিরতা, দু:শ্চিন্তা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।

২. ইতিবাচক ভাবনা ও ঘটনাগুলো লিখে রাখুন:-ইংরেজীতে একে বলা হয় “Blessing List” – পৃথিবীর অনেক সফল মানুষই এই কাজটি করে থাকেন।  ভূমিকায় বলা হয়েছিল যে আপনার চারপাশে নেতিবাচকতার পাশাপাশি অনেক ইতিবাচকতাও ঘিরে থাকে।  প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন/প্রার্থনার পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে আপনার জীবনের পজিটিভ দিকগুলো লিখুন।  জীবনের কোন কোন ঘটনা ও বিষয়ের জন্য আপনি জীবন ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ তা এই লিস্টে লিখতে থাকুন।  প্রতিদিন জীবনের নতুন নতুন ইতিবাচক দিকগুলো ভেবে বের করুন। এতে করে আপনি প্রতিদিনই নতু করে অনুপ্রেরণা ও এনার্জি পাবেন।  এছাড়াও যখনই আপনার কাজ বা অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে চাপ আসবে, অল্প একটু সময় বের করে সেইসব ব্যাপারের ইতিবাচক দিকগুলো লিখুন। সবথেকে ভাল হয় এসব লেখার জন্য যদি আপনি একটি জার্নাল বা ডায়েরী রাখতে পারেন।  মাঝে মাঝেই এই লেখাগুলোতে চোখ বুলান। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য এটা করলে আপনার ফোকাস জীবনের নেতিবাচক দিকগুলো থেকে সরে এসে ইতিবাচক দিকে সরে আসবে। আপনার সবধরনের চিন্তাভাবনাই ইতিবাচক দিকে পরিচালিত হতে থাকবে।

৩. সকালে উঠেই খবর/সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুব দেবেন না

খবরের কাগজের প্রথম পাতাগুলো বেশিরভাগ সময়েই খারাপ খবর দিয়ে ভরা থাকে।  সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও মানুষ বেশিরভাগ সময়ে হতাশা, দু:খ, নির্মম বাস্তবতা – ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয় শেয়ার করে।  বর্তমানে আমাদের মাঝে অনেকেরই সকাল শুরু হয় এই দু’টোর একটি দিয়ে। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক মনে হলেও এইসব নেতিবাচক খবর ও কনটেন্ট আপনার অবচেতন মনে একটি নেতিবাচক প্রবাহ সৃষ্টি করে – যার ফলে আপনি নিজের অজান্তেই মন খারাপ করে ফেলেন।  আর দিনটা মনখারাপ দিয়ে শুরু হলে সারা দিনই সেই প্রভাব নিয়ে কাটে। কাজেই সকালে উঠে প্রথমেই খবর, সোশ্যাল মিডিয়া – ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। মেডিটেশন, ব্যায়াম ইত্যাদি সারার পর কোনও পজিটিভ, উ‌ৎসাহমূলক বই বা আর্টিকেল পড়ুন, মন ভাল হয় এমন কিছু একটার কাছে যান।  বাগানের ফুলে পানি দিন, পোষা প্রাণীর পরিচর্যা করুন, সন্তান বা প্রিয়জনের সাথে একটু ভাল সময় কাটান। এতেকরে আপনার সারাদিন সেই পজিটিভ ও খুশি খুশি ভাবটি বয়ে বেড়াতে পারবেন। নেতিবাচকতা আপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা।

৪. নিজের আশপাশের পরিবেশে ইতিবাচকতা নিয়ে আসুন: মনেকরুন আপনার দুইজন বন্ধু আছে।  এদের একজন সব সময়ে তার জীবনের ছোট থেকে ছোট বিষয়গুলো নিয়েও সব সময়ে আফসোস করে।  পৃথিবীর সবকিছু নিয়ে তার নেতিবাচক ভাবনা ও মতামত। অন্যদিকে আরেকজন সব সময়ে হাসিখুশি থাকে।  প্রতিটি বিষয়ে তার একটি ইতিবাচক ভাবনা ও মতামত আছে। অবস্থা যত খারাপই হোক সে আশা করে যে এক সময়ে না এক সময়ে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।  তার আশপাশের সবাইকে সে সবসময়ে ইতিবাচক কথা বলে। – এখন আপনিই বলুন, কার সাথে সময় কাটাতে আপনি বেশি পছন্দ করবেন? কাকে আশপাশে রাখলে আপনার মন প্রফুল্ল থাকার সম্ভাবনা বেশি?

আমরা অনেক সময়েই বুঝতে পারিনা আমাদের আশপাশের মানুষের আচরন কিভাবে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে।  একজনের অনুভূতি কিভাবে ছোঁয়াচে রোগের মত আরেকজনের ভেতরে ছড়িয়ে যায়। আপনি যদি নেগেটিভ মানুষদের সাথে বেশি সময় কাটাতে থাকেন, তাহলে দেখা যাবে একটা সময়ে তাদের সেই নেগেটিভ মনোভাব আপনার ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।  অকারনেই আপনার মন মেজাজ খারাপ হয়ে থাকবে – যার ব্যাখ্যা আপনি নিজেও দিতে পারবেন না। কিন্তু সত্যি কথা হল, এতে আপনার কোনও দোষ থাকবেনা। শুধুমাত্র আপনার আশপাশের মানুষের মনোভাবের কারনে আপনিও তাদের মত হয়ে উঠবেন।

তাই সব সময়ে চেষ্টা করুন আপনার আশপাশে ইতিবাচক মানুষদের একটি চক্র গড়ে তুলতে।  নেতিবাচক মানুষদের থেকে যত দূরে থাকবেন ততই ভাল। আর এধরনের মানুষেরা বেশিরভাগ সময়েই স্বার্থপর ধরনের হয় – এই কারনেই তারা নিজেদের নিয়ে বেশি দু:শ্চিন্তা করে।  আপনার যদি মনেহয় যে আপনি তাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে স্বার্থপরতা করছেন – তাহলে ভুল করবেন। আপনি স্বার্থপরদের শিকার হওয়া থেকে বাঁচার জন্যেই দূরে সরে যাচ্ছেন। নিজেদের স্বার্থে টান পড়লে এসব মানুষ এক মূহুর্তের জন্যও আপনার কথা ভাববে না।

নেতিবাচক মানুষের বাইরেও আরও কিছু পরিবেশগত ব্যাপার আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।  অতিরিক্ত ভায়োলেন্স পূর্ণ সিনেমা, পোস্টার, গল্প-উপন্যাস – ইত্যাদিও মানুষের অবচেতন মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে – কাজেই ইতিবাচক পরিবেশের জন্য এগুলো থেকেও যথা সম্ভব দূরে থাকুন।

৫. মনকে সচল রাখুন:-একটি মন যখন সচল থাকে তখন সেই মনে তেমন কোনও নেতিবাচক ভাবনা আসতে পারে না।  আপনার জীবনের একটি লক্ষ্য স্থির করুন, এবং প্রতিদিন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যান।  সমস্যার জায়গায় সমাধানের দিকে ফোকাস করুন। সমাধানের পদ্ধতির দিকে ফোকাস করুন। সমস্যা নিয়ে চিন্তা করলে কোনও লাভ হয়না।  সমাধানের দিকে ফোকাস করে সেই অনুযায়ী কাজ করলে সমস্যা এমনিতেই মিটে যাবে। মনকে সব সময়ে পরিকল্পনা ও জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত রাখুন।  সব সময়ে নতুন কিছু শেখার জন্য মনকে খোলা রাখুন। যে বিষয়ে আপনি দক্ষ আছেন, বা হতে চান – সেই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করুন অথবা টিউটোরিয়াল দেখুন।  – মোটকথা মনকে ভাল কাজে ব্যস্ত রাখুন, শেখায় ব্যস্ত রাখুন। নেতিবাচকতা আপনার ওপর প্রভাব ফেলার সময়ই পাবে না।

প্রতিদিন এই পাঁচটি কাজ করুন।  এগুলো শৃঙ্খলার সাথে করতে পারলে আপনার প্রতিটি দিন দারুন ইতিবাচকতার মধ্যদিয়ে কাটবে।  এরফলে আপনি আরও ভালভাবে আপনার কাজগুলো করতে পারবেন। জানাকে যদি মানায় রূপান্তর না করতে পারেন, তবে যতই জানুস, কোনও লাভ নেই।  প্রথম পদক্ষেপ না নিলে সামনে এগুনো শুরু করা যায় না। কাজেই আপনার যদি মনেহয় যে আপনার মনের নেতিবাচকতাগুলো আপনি প্রতিদিন দূরে সরিয়ে রাখতে চান – তাহলে পরখ করে দেখার জন্য হলেও এই পদক্ষেপগুলো প্রতিদিন অনুসরন করুন।

সিইও হওয়ার ৩টি কৌশল

শুধু যোগ্যতা এবং মেধা দিয়ে কর্মক্ষেত্রে দ্রুত ওপরে ওঠা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে যোগ করতে হয় বিশেষ কৌশল। আধুনিক যুগে অনেক কম বয়সেই মানুষ উচ্চপদে চলে যেতে পারেন। এদের দলে মার্ক জাকারবার্গের মতো মানুষদের দেখতে পাই আমরা। এখানে নিন ৩টি মৌলিক পরামর্শ। এর মাধ্যমে তিরিশের আগেই সিইও হওয়ার সম্ভাবনা দোরগোড়ায় চলে আসবে।

১. প্রথম কাজটি হবে বিশ্বস্ত পরামর্শদাতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। বিশেষ করে যে সব স্থানে আপনার দুর্বলতা রয়েছে, সে সব খাতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে ফেলুন এবং নানা কাজে পরামর্শ নিন। এক সময় তারা আপনার নিয়তিম পরামর্শদাতা হয়ে উঠবেন। এমন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে আপনার ভুলের সংখ্যা খুব কম হবে। এমনকি মৌসুমি সিইওদেরও এ ধরনের মানুষদের সঙ্গে সদ্বাভ থাকতে হয়। এমন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মার্ক জাকারবার্গ এবং শেরিল স্যান্ডবার্গ। প্রযুক্তির দুনিয়ার এই অভিজ্ঞ নারীকে তিনি তার আদর্শ পরামর্শদাতা হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন।

২. ইতিবাচক এবং নেতিবাচক চিন্তাধারার শক্তি কাজে লাগান। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনি হয়তো একটি ব্যবসা দিলেন। কিন্তু এর ভালো-মন্দ দুই ক্ষেত্রেই চিন্তা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তারা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে চান। তবে অনেকে বড় ভুল করেন ট্র্যাক রেকর্ড না সংরক্ষণ করে। আইডিয়া সৃষ্টি করে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক বিবেচনা না করতে পারলে বিপদ। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি যথেষ্ট সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু ঠিক একই কারণে অসম্ভব কাজগুলো চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই দুটো বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করুন। যখন এ দুটো দিকই সমানভাবে বিবেচনা করতে সক্ষম হবেন, তখনই কাণ্ডারি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।

৩. আচার ব্যবহারে নম্রতা ধরে রাখুন। যেকোনো আলোচনা ও চুক্তিতে আচরণের মাধ্যমে অনেক ভালো কিছু অর্জন করা যেতে পারে। সামনে এগোনোর পরও পেছনে আরো ভালো কোনো পথ ফেলে আসতে পারেন। সেই পথে হাঁটতে আবারো পিছে যাওয়াটা বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ। আবার কর্মী খুঁজে নেওয়ার ক্ষেত্রেও আপনাকে বুদ্ধিমান হতে হবে। সম্ভাবনাময় কর্মী তারাই হয়ে ওঠেন যারা আচরণ দিয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। এরাই ভবিষ্যতের সিইও হতে সক্ষম। হাই পারফরমেন্স অর্গানাইজেশন গড়ে তুলতে পেশাদার আচরণ সিইওদের কাছে সবার কাম্য থাকে। তাই আচরণের দিক থেকে পেশাদার হয়ে উঠুন।

সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

উদ্যোক্তা হতে হলে যে বইগুলো পড়া উচিৎ

নিজের স্বপ্ন নিয়ে যাঁরা মাঠে নামেন তাঁরাই উদ্যোক্তা। নিশ্চিত জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে তাঁরা এগিয়ে যান অনিশ্চয়তার দিকে। স্বপ্নই তাঁদের পথ দেখায়। তবে হঠাৎ করে কেউ উদ্যোক্তা হন না। এর পেছনে থাকে কঠোর অধ্যবসায়, সময়ের সঠিক ব্যবহার ও একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের অভিপ্রায়।স্টিভ জবস, বিল গেটস বা জেফ বেজোস এঁরাই আজকের দিনের উদ্যোক্তাদের কাছে অনুসরণীয়। পৃথিবী বদলে দেওয়া প্রযুক্তি তৈরি করেছেন তাঁরা। মানুষের জীবনকে তাঁরা এমনভাবে বদলে দিয়েছেন যে তাঁদের সময়ে যেটা কেউ ভাবতেই পারেননি।

সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বাকিদের থেকে কিছুটা এগিয়ে তো থাকতেই হবে। আর সেজন্য দরকার প্রচুর পড়াশোনা। চারপাশ থেকে শেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তারা শেখেন বই পড়ে। এমনকি বিল গেটস শত ব্যস্ততার মাঝে এখনো নিয়মিত বই পড়েন। উদ্যোক্তার পড়া উচিত এমন ১০টি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে বাণিজ্য সাময়িকী বিজনেস ইনসাইডার।

IMG_7578916307১. দ্য ফাউন্টেন হেড : আয়ান রান্ড

বিলিওনিয়ার মার্ক কিউবান বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ‘এই বই সব উদ্যোক্তার জন্যই পড়া উচিত’। ব্রুকলিন ব্রিজ ভেঞ্চার্সের পার্টনার চার্লি ও’ডেনেলেরও প্রিয় বই এটা। তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের কেন স্বপ্ন এবং সাহস থাকতে হয় সেটা অন্য কোনো বইয়ে এত সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে কি না আমি জানি না। কে আপনাকে সাহায্য করবে সেটা না ভেবে কে আপনাকে বাধা দেবে সেটাই উদ্যোক্তাদের মনে রাখতে হবে।’

২. দ্য এফেক্টিভ এক্সিকিউটিভস : পিটার ড্রাকার

অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস তাঁর সিনিয়র ম্যানেজারদের এই বইসহ আরো দুটি বই পড়ার পরামর্শ দেন। অফিস ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন লেখক পিটার ড্রাকার। এ ছাড়া নির্বাহীদের সময় ব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।

৩. দ্য ইনোভেটরস ডিলেমা : ক্ল্যাটন ক্রিস্টেনসন

জেফ বেজোসের পছন্দের আরেকটি বই। এটিও তিনি কর্মীদের পড়ার পরামর্শ দেন। উদ্যোক্তাদের খুবই পছন্দের বই এটি। সামাজিক উদ্যোক্তা স্টিভ ব্ল্যাংক বইটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠান কেন ডাইনোসরের মতো আচরণ করে সেটার একটা যুক্তিসংগত কারণ ও উত্তর দিয়েছেন ক্ল্যাটন। উদ্যোক্তাদের অবশ্যই বইটি পড়া উচিত। তাহলে বাজারে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় সেটা তাঁরা বুঝতে পারবেন।’

1453703533-books-1

৪. বিজনেস অ্যাডভেঞ্চার্স : জন ব্রুকস

বিল গেটসের খুবই পছন্দের বই। ১৯৯১ সালে ওয়ারেন বাফেট এই বই তাঁকে পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বইটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘সব ব্যবসাতেই উদ্যোক্তাদের কিছু শক্তি ও দুর্বলতা থাকে। তাদের সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয়। কিন্তু বিজনেস অ্যাডভেঞ্চার্স বইটি সব পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের কাজে লাগবে।’

৫. বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন : ওয়াল্টার ইসাকসন

গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ও বিলিওনিয়ার এলোন মুস্কের পছন্দের বই এটি। বইটি সম্পর্কে মুস্ক বলেন, ‘বইটা পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন ফ্রাঙ্কলিন কেন উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন। বাড়ি থেকে পালিয়েও গিয়েছিলেন তিনি।’

ওয়াল্টার ইসাকসনের লেখা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের জীবনী ‘আইনস্টাইন : হিজ লাইফ অ্যান্ড দ্য ইউনিভার্স’ও  পড়ার পরামর্শ দেন মুস্ক।

৬. থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ : ন্যাপোলিওন হিল

ফ্যাশন হাউস ফুবুর সহপ্রতিষ্ঠাতা ডায়মন্ড জন বইটি সম্পর্কে বলেন, ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ – আমার জীবন বদলে দিয়েছে। এই বই আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে নিজের লক্ষ্য ঠিক করতে হয়। আমাদের বেশির ভাগ মানুষেরই লক্ষ্য ঠিক থাকে না বলে আমরা সাফল্য পাই না।’

1453703442-books2

৭. কনশাস ক্যাপিটালিজম : জন ম্যাকি ও রাজ সিসোদিয়া

দ্য কনটেইনার স্টোরের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কিপ টিনডেলের মতে উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য এটা অবশ্যই পাঠ্য বই। কিপ টিনডেল বলেন, ‘সবাই মুনাফা চায়, কেউ লোকসান চায় না। বিজনেস স্কুলগুলো এ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছে, ছাত্রদের পড়িয়েছি কিন্তু এই বই সবচেয়ে ভালোভাবে মুনাফা তুলে আনার বিষয়টি বর্ণনা করেছে।’

৮. অ্যাজ আ মেন থিংকেথ : জেমস অ্যালেন

হেজ ফান্ডের এক্সিকিউটিভ কোচ টনি রবিনস বলেন, ‘আমি অ্যাজ আ ম্যান থিংকেথ বইটি ১২ বারেরও বেশি পড়েছি। বইটির ভাষা সাবলীল এবং খুব নির্দিষ্টভাবে বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে এতে।’

৯. থিংস হিডেন সিন্স দ্য ফাউন্ডেশন অব দ্য ওয়ার্ল্ড : রেনে গিরার্ড

ফ্রেঞ্চ দার্শনিক রেনে গিরার্ডের এই বইটি খুব পছন্দের পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্রাবস্থায় বইটি প্রথম পড়েছিলেন পিটার থিয়েল। তাঁর মতে, ‘এই বই থেকে দুটি জিনিস শেখার আছে। প্রথমত প্রতিদ্বন্দ্বীদের কথা ভাবতে গিয়ে অনেক সময় উদ্যোক্তারা নিজেদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যান। দ্বিতীয়ত প্রতিযোগিতা সবসময় আপনার যোগ্যতার পরিমাপক নয়।’

1453703546-books3

১০. সিউরলি ইউ আর জোকিং মিস্টার ফেনিম্যান : রিচার্ড পি. ফেনিম্যান

গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সার্গেই ব্রিন বলেছেন, ‘রিচার্ড ফেনিম্যানের এই আত্মজীবনী আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে। এই কারণেই প্রযুক্তি এবং সৃষ্টিশীল কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়েছি আমি।’ কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিক্স নিয়ে কাজ করার জন্য ১৯৬৫ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রিচার্ড পি. ফেনিম্যান।

ব্রিনের ভাষ্যমতে, ‘নিজের কাজের ক্ষেত্রে তো তিনি সফল ছিলেনই। এ ছাড়া তিনি ছিলেন উদার মনের মানুষ। বইতে তিনি লিখেছেন, তিনি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো একজন বিজ্ঞানী ও শিল্পী হতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়টা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে। আমার মনে হয় এ ধরনের স্বপ্নই আপনার জীবনকে পরিপূর্ণ করে।’

Cart
Your cart is currently empty.