পাইনি ব’লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি, মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি! আমি এ-পার, তুমি ও-পার, মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার ও-পার হ’তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি, আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।
নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়! আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়! এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে, আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার ক’রলো না কূল ক্ষয়, কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!
চেনার বন্ধু, পেলাম না ক’ জানার অবসর। গানের পাখী ব’সেছিলাম দু’দিন শাখার’ পর। গান ফুরালো যাব যবে গানের কথাই মনে রবে, পাখী তখন থাকবো না ক’-থাকবে পাখীর ঘর, উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!
তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ, অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক’ কেউ। উড়তে গিয়ে পাখা হ’তে একটি পালক প’ড়লে পথে ভুলে’ প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও! ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!
বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী? মনের মনে নিশীথ-রাতে চুমু দেবে কি কল্পনাতে? স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি! মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!
দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল! কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল! তোমায় পেলে থামত বাঁশী, আসত মরণ সর্বনাশী। পাইনি ক’ তাই ভ’রে আছে আমার বুকের কোল। বেণুর হিয়া শূন্য ব’লে উঠবে বাঁশীর বোল।
বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও, দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও। থাকবে তুমি ছায়ার সাথে মায়ার মত চাঁদনী রাতে! যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও! শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!
ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর! তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর। কোথায় আছ কেমনে রাণি কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি! ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর! চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক, নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ, দুখের সুরায় মস্ত্ হ’য়ে থাকবে এ-প্রাণ তোমায় ল’য়ে, কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ! ঘুমে জাগায় জড়িয়ে র’বে, সেই তো চরম সুখ!
গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান। থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান! শিল্পী আমি, আমি কবি, তুমি আমার আঁকা ছবি, আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান। চাইব না ক’, পরান ভ’রে ক’রে যাব দান।
তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর, কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির। গোপন তুমি আসলে নেমে কাব্যে আমার, আমার প্রেমে, এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর? দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!
বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান, মনে আমায় ক’রবে না ক’-সেই তো মনে স্থান! যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ! নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!
ইন্টারনেটে মত প্রকাশ, বিভিন্ন ধরনের তথ্য শেয়ার ও ডেইলি লাইফের নানান দিক নিয়ে আলোচনা করার অন্যতম একটি জনপ্রিয় স্থান হলো ব্লগিং (Blogging)। বর্তমানে ব্লগিং এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা যায় বলে এর চাহিদা ক্রমশই বেড়েই চলেছে। যে কোন শ্রেনী পেশার মানুষ যে কোন জায়গা থেকেই ব্লগিং শুরু করতে পারে। আজ আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
ব্লগিং কি (What is Blogging):
মূলত ব্লগ (Blog) একটি ইংরেজী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো ভার্চুয়াল ডায়েরী অথবা ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত দিনলিপি। পক্ষান্তরে এই ইংরেজি ”Blog” শব্দটি আবার ”Weblog” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৯৯৭ সালে জোম বার্গার নামে একজন মার্কিন নাগরিক সর্বপ্রথম ”Weblog” শব্দটি উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে, ১৯৯৯ এর এপ্রিল বা মার্চের দিকে ‘পিটার মেরহোলজ’ তার নিজস্ব ব্লগ পিটার্ম ডট কমে কৌতুক করে ‘weblog’ শব্দটিকে ভাগ করে ‘blog’ বলে সম্বোধন করেন। তারপর থেকে ‘blog’ শব্দটির ব্যাবহার প্রসার ঘটতে থাকে।
বেশিরভাগ ব্লগই যে কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে যাবতীয় খবরাখবর প্রকাশ করে থাকে। বাকীগুলো ব্যক্তিগত অনলাইন দিনলীপি। একটি ব্লগ হলো লেখা, ছবি, অন্য ব্লগ, ওয়েব পৃষ্ঠা, এ বিষয়ের অন্য ওয়েব সাইটের লিংক ইত্যাদির সমাহার। পাঠকদের মন্তব্য করার সুযোগ দেয়া ব্লগের অন্যতম একটি দিক। প্রায় ব্লগই মূলত টেক্সট-বেসড বা লেখাভিত্তিক। কিন্তু কিছু ব্লগ আবার শিল্প (আর্ট ব্লগ), ছবি (ফটোব্লগ), ভিডিও (ভিডিও ব্লগিং), সঙ্গীত (এমপিথ্রিব্লগ) আর অডিও (পোডকাস্টিং) ইত্যাদির উপর গড়ে উঠে। মাইক্রোব্লগিং-ও আরেক ধরনের ব্লগিং, যেখানে পোস্টের আকার তূলনামূলক ছোট থাকে। জুন, ২০১৭-এর হিসেবে, ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন টেকনোরাট্টি প্রায় বাইশ মিলিওনেরও বেশি ব্লগের হদিশ পেয়েছে
ব্লগার (Blogger) কাকে বলে:
সাধারনত, যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলার হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নেন এবং সেখানে তাদের মন্তব্য বা অভিবাক্তি প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে ব্লগিং, ফ্রিলান্স সাংবাদিকতার একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক ব্লগার রা এটি নিয়মিত আপডেট করেন।
অনেকেই ওয়েবসাইট এবং ব্লগ এর পার্থক্য বোঝেন না। ওয়েব সাইট থেকে ব্লগের মূল পার্থক্য হল ওয়েব সাইট আপডেট করা হয় অনিয়মিত ভাবে অপর দিকে ব্লগ আপডেট করা হয় নিয়মিত ভাবে। এমনকি কিছু কিছু ব্লগ আছে যেগুলো কিনা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হয় যাতে করে পাঠকগন সক্রিয় থাকার মাধ্যমে অনেক বিষয় সহজেই জানতে পারে।
জানা-অজানা বিভিন্ন বিষয়গুলো, অথবা সাম্প্রতিক কোন বিষয়সমূহ নতুন করে সহজ ও বোধগম্য ভাবে জানানো, কিংবা নিজের অভিব্যক্তি ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হলো ব্লগিং। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, বিভিন্ন স্পনসরসিপ, অ্যাফিলিয়েশন ও অ্যাডভারটাইসমেন্ট থেকে ইনকাম সোর্স সৃষ্টি হওয়ার ফলে সারা বিশ্বে তথা বাংলাদেশেও ব্লগিং এর চাহিদা ক্রমশই বেড়েই চলেছে।
আপনি যদি ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে প্রাথমিকভাবে অবশ্যই আপনার নিচের জিনিসগুলো প্রয়োজন হবে।
একটি ডিজিটাল ডিভাইস যেমন:- স্মার্ট ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার।
একটি ইন্টারনেট কানেকশন।
একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট।
বাংলায় লেখার জন্য বিজয় অথবা অভ্র সফ্টওয়্যার ।
ব্লগিং সাইট গুলোতে লেখার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট।
জেনে নিন ব্লগিং থেকে আয় করার ৫ টি ধাপ:
কিভাবে ব্লগিং শুরু করার পর সেখান থেকে আয় করবেন সেটা নিয়ে অনেকেরই মনে নানার ধরনের প্রশ্ন আছে। আশাকরি নিচের লেখাগুলো পড়লে এই বিষয়ে অনেকটা ধারনা পাবেন।
প্রথমত, সঠিক ডোমেইন নাম নির্বাচন করা
একটি ব্লগ সাইট তৈরি করার শুরুতে প্রথম কাজটি হলো, একটি ব্রান্ডেবল, উচ্চারনে সহজ ও শ্রুতিমধুর এবং সবার মনে থাকবে, এমন একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করতে হবে। এতে করে ব্লগ সাইটটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং ভিজিটর বা পাঠক তত বৃদ্ধি পাবে।
দ্বিতীয়ত, ভালো মানের হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করা
ডোমেইন নাম নির্বাচন করার পর একটি ভালো মানের হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করতে হবে। হোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করার আগে অবশ্যই তাদের কাস্টমার রিভিউ এবং কেনার পরবর্তী সাপোর্ট সার্ভিস কেমন সেটা জেনে তারপর কিনবেন। কিভাবে ভালো মানের হোস্টিং কিনবেন জানতে ভিজিট করুন এখানে।
তৃতীয়ত, ব্লগ ডিজাইন করা
ডোমেইন ও হোস্টিং নেওয়ার পর এখন ব্লগটি ডিজাইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমে হোস্টিং সিপ্যানেলে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে নিতে হবে। তারপর একটি থিম ইনস্টল করে প্রয়োজনীয় কাস্টমাইজ করে পছন্দমতো ডিজাইন করতে হবে। কিভাবে থিম কাস্টমাইজ করবেন সে বিষয়ে ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাবেন। সেগুলো দেখে আপনি নিজেই ব্লগটি ডিজাইন করতে পারবেন। আর আপনি যদি নিজে না করতে পারের তাহলে যে কোন ওয়েব ডিজাইনার অথবা ওয়েব ডেভেলপার এজেন্সি কে দিয়ে আপনার ব্লগ সাইটি ডিজাইন করে নিতে পারেন।
চতুর্থ, কন্টেন্ট লেখা, পাবলিশিং এবং মার্কেটিং করা
ব্লগটি ডিজাইন করার পর একটি নির্দিষ্ট বিষয় এর উপর কন্টেন্ট লিখে সেগুলো উক্ত ব্লগে পাবলিশ করতে হবে। কন্টেন্ট লিখার ক্ষেত্রে অবশ্যই তথ্যবহুল এবং সার্বিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ব্লগে কন্টেন্ট পাবলিশ করার পর সেগুলো বিভিন্ন সোসাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে হবে। এজন্য আগে থেকেই সেই ব্লগের নামে সকল পপুলার সোসাল মিডিয়া সাইট (Facebook, Twitter, Instagram, Pinterest, Quora ইত্যাদি) গুলোতে বিজনেস পেজ ও অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
ফাইনালি, ব্লগে অ্যাডসেন্স বা স্পনসরসিপ যুক্ত করা
উপরের ৪ টি ধাপ সম্পন্ন করার পর যখন আপনার ব্লগে অধিক সংখ্যাক ভিজিটর বা পাঠক আসা শুরু হবে। তখন আপনি গুগল ও অন্যান্য কোম্পানি থেকে অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন। তারপর সেটা আপনার ব্লগ সাইটের সাথে কানেক্ট করে সেখান থেকে নিদির্ষ্ট পরিমাণ রিভিনিউ প্রতি মাসে আয় করতে পারবেন।
পাশাপাশি, যখন এটি আরও পপুলার হবে তখন অনেক কোম্পানি আপনার ব্লগ সাইটে স্পনসর করার জন্য যোগাযোগ করবে। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় বাংলাদেশের প্রথম ব্লগ সাইট সামহোয়্যারইনব্লগ এর কথা।
পরিশেষে
উপরের পোস্টি পরার পর, আশাকরি ব্লগিং কি ? কিভাবে ব্লগিং শুরু করার পর সেখান থেকে আয় করবেন সে সম্পর্কে একটু হলেও জানতে পেরেছেন। এছাড়া এ সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আমরা গুরুত্ব সহকারে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আপনার ব্লগিং এর জন্য অগ্রিম শুভ কামনা রইলো।