আর্থ সামাজিক চাপ সামলাবেন কি করে?
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্যারিয়ার আর সন্তুান মানুষ করার টেনশনে আর্থ-সামাজিক চাপ বেড়ে গিয়ে তা সুখ নষ্ট হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর চাপটা সঠিকভাবে সামলাতে না পেরে আমরা জীবনের গতিপথ থেকে হারিয়ে যাই। আসুন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নেয়া কিছু টিপস থেকে কোনো নির্দেশনা খুঁজে নিতে পারি কিনা দেখা যাক।
১. নিজের অবস্থান অনুযায়ী জীবনে উন্নতির জন্য সুন্দর একটি ছক করুন। আগামী ১০ বছর পর কোথায় যেতে চান সে গন্তুব্য ঠিক করুন। তাহলে ৫ বছর পর তাকে কোথায় থাকতে হবে সেটাও বুঝুন। এবার আগামী একবছরের মধ্যে কতটুকু উন্নতি করবেন আর সেটার জন্য কি কি করবেন কিভাবে করবেন তার একটা পরিকল্পনা স্থির করুন। মনে রাখবেন কারো লক্ষ্য যেন হয় বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
২. আরেকটি উপায় হলো- কারোা যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন সবাইকে কোটিপতি হতে হবে এটা কোনো কথা নয়। ভালো আছেন কি না, এটাই আসল কথা।
৩. কথায় বলে কিছু লোক প্রথম জীবনে অর্থের পিছে ছুটে আর অর্থ কামাই করে কিন্তু তারা শরীর স্বাস্থের দিকে নজর না দিয়ে শারীরিকভাবে নানা সমস্যার মুখোমুখী হয়। শেষ জীবনে তারা এবার শরীর বাঁচানোর জন্য অর্জিত সম্পদ ব্যয় করতে থাকে। শেষে তাদের স্বাস্থ্যও ফিরে আসে না আর অর্থও থাকে না। তারা নাকি দুটোই হারায়। খেয়াল করুন কারো বেলায় এমনটা যেন না হয়।
৪. ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছু সঞ্চয় করুন। হাতে আরো টাকা আসলে তারপর সঞ্চয় করবেন এটা ঠিক নেয়। রোজগার যেমনই হোক সঞ্ছয় করুন। কম হলে কম সঞ্চয় করুন। জমার টাকা ছোট অংকের হলে সেটা ছোট একটা কাজে লাগবে আর বোড়া অংকের হলে বড় কাজে লাগবে। ছোট একটা সহযোগিতা বিপদের সময়ে অনেক মূল্যবান থাকে।
৫. রিস্ক কাজ নেয়া বা ঝুকিপূর্ণ ইনভেস্টমেন্টে থেকে দূরে থাকুন। আবেগে পড়ে কোনো কাজ করবেন না। কারো কথার তালে ভালোভাবে না জেনে কোনো কাজে হাত দেবেন না।
৬. অলীক কল্পনা করবেন না। যেমন ভাবছেন রাস্তা দিয়ে যাবার পথে কারো গায়ে এসে একবস্তা টাকা পড়বে। অথবা কোনো গুপ্তধন কিংবা চোরাই মাল সহসা পেতে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন পরিশ্রম ছাড়া মানুষ বড় হয়েছে এমন কোনো নজীর পৃথিবীতে নেই। কাজ করে যান ফল একদিন পাবেনই।
৭. মোটামুটি রক্ষণশীল জীবনযাত্রায় সন্তুষ্ট থাকুন। কারো অর্থ -বিত্ত কিংবা সুযোগ যাই থাকুক সীমা লংঘনের চিন্তুা মাথায় আনবেন না। জীবনটাকে একটি কাঠামোর মধ্যে রাখুন। অনিয়ন্ত্রিত জীবন মানুষের শুধু বিপদ কিংবা অধ:পতন নয় প্রাণহানির কারণও বটে।
৮. নারীঘটিত ব্যাপার, মাদক, নেশা, স্মাগলিং এসব কাজ থেকে দূরে থাকুন। বড়লোক হওয়ার কোনো শর্টকাট উপায় নেই। এধরনের কোনো রাস্তা অবলম্বন করতে গিয়ে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবেন না।
৯. অর্থঘটিত-মানসিক চাপ মোকাবিলার দুটো পথ আছে। একটি হয় নির্দিষ্ট ইনকামের মধ্যে কারো জীবনযাত্রা নিয়ে আসুন। অথবা অপনার ইনকাম বাড়ান। আয় না বাড়িয়ে খরচ করার কথা ভাবা বোকামী।
১০. অন্যকে দেখে ঈর্ষান্বিত হবেন না। টাকা কামানোর যোগ্যতা বা ভাগ্য দুটোই আলাদা এটা একজন মুচিরও থাকতে পারে আবার একজন সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরও না থাকতে পারে। আপনার টাকা না থাকলেও নিজের কিছু ভালো ব্যাপার আছে সেগুলোকে দাম দিন, যত্ন নিন, দেখবেন ভালো আছেন। হয়তো সমাজে কারো ভালো সম্মান আছে। হয়তো কারো সন্তুানেরা বেশ ভালো। হয়তো কারো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বেশ ভাব। হয়তো কারো একটা ভালো ফ্রেণ্ড সার্কেল আছে। হয়তো কারো ঘরে অনেক বই আছে। হয়তো কারো নিজের অনেক নলেজ আছে। দেখুন যাদের মতো হতে চান তাদের অনেকের হয়তো এগুলো নেই।
১১. ততটাই ঋণ করুন যতটার ভার নিতে পারবেন। মনে রাখবেন কোনো বিলাসবসন এর জন্য ঋনের ফাঁদে পা দেবেন না। মানুষের নানা বিপদ আপদ থাকে সেজন্যওতো ঋণ করতে হতে পারে। যদি আগেই ঋণ করে ঋণ পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেন তাহলে বিপদের সময় কারো কাছে সাহায্য নাও পেতে পারেন।
১২. পরিবারে সে সিদ্ধান্তু গ্রহণ করুন না কেন এ ব্যাপারে পারস্পরিক যোগাযোগ বা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন। সবার মত বুঝে সিদ্ধান্তু নিন। কারো ভুল ধারণা থাকলে তার সাথে কথা বলে নিন।
১৩. বোঝার চেষ্টা করুন অতিরিক্ত আর যথেষ্ট এর মাঝের ফারাক। তাই যথেষ্ঠ হয়ে গেলে অতিরিক্ত কিছু ভোগ করা থেকে বিরত থাকুন। কারো প্রয়োজন যেন লাগামহীন না হয় সেটা মনে রাখুন।
১৪. সমঝোতার যে কথা বলা হচ্ছে তার মানে এই নয় যে, যেমন আছেন তেমন থাকুন। আসলে ততটাই ইনকামের চেষ্টা করুন যাতে করে আরামে থাকতে পারেন।
১৫. আবার সব ইনকাম টাকা-পয়সায় বিচার করবেন না। সব ক্ষেত্রে যে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন তা কিন্তু নয়। কোনো ক্ষেত্রে আপানি কিছু শিখতে পারবেন, কখনো সামাজিক মর্যাদা পাবেন কখনো পাবেন মানসিক শান্তিু। তাই সবকিছুকে টাকা দিয়ে বিচার করবেন না। শান্তিু নষ্ট হবে।
১৬. এছাড়া সন্তুানদের ভালোভাবে মানুষ করাও এক ধরনের ইনকাম। টাকাই ইনকাম, এই অনুভূতি বদলান। কারো আত্মসম্মান এবং আত্মতৃপ্তির দিকে নজর দিন। কারো একটা পুরষ্কার, সন্তুানের পরীক্ষার ফলাফলও কারো সুখের কারণ হতে পারে।
১৭. নিজের কাজের পাশাপাশি শখের কোনো কাজ, বাগান করা কিংবা পোষা এমন কোনো শখ রাখতে পারেন। একটি সামাজিক কাজ বা সংগঠন এর সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। মাসে অন্তুত একবার সামাজিক কাজে সময় দিতে পারেন। ভেতর থেকে একটা সত্তা বলবে ভালো কাজ করছেন এবং ভালো আছেন।
১৮. সব সময় কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কেনো ঘটলো তা নিয়ে হা-হুতাশ করা থেকে বিরত থাকুন। বরং ঘটনা ঘটার পর এখন কি করণীয় তা নিয়ে ভাবুন। তবে ভুল শুধরে নেয়ার জন্য পেছনের কার্যকারণ অনুসন্ধান করতে পারেন কিন্তু পেছনের ভুলের জন্য হাপিত্যেস করে কোনো লাভ নেই।
১৯. কাউকে টাকা ধার দিতে চাইলে তার এবং আপনার নিজের সামর্থ অনুযায়ী দেন। তার উপকার করার জন্য দিন। তার কাছ থেকে কোনো কিছু পাওয়ার লোভে টাকা ধার দেবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় কারো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে তার সাথে লেনদেন না করা। আর নেহায়েত করতে হলে সতর্ক থেকেই করুন। ৫ হাজার টাকা কাউকে ধার দেয়ার চাইতে ৫শ টাকা সাহায্য করা ভালো। এটা অবশ্য আমার মতামত। ৫ হাজার টাকার জন্য যখন কারো জীবন মরণ সমস্যা হবে তখন নিশ্চয় অন্যভাবে ভাবতে হবে।
২০. ছোটখাটো বিষয়গুলোকে বড় করবে না। ৫ টাকার জন্য রিকসা ড্রাইভার কিংবা বাসের কন্টাকটরের সাথে ঝামেলা পাকাবেন না। প্রতিমাসে আগে থেকে হিসেব করে রাখুন। কারো ৫শ টাকা অথবা ৫ হাজার বাড়তি কোনো কাজে খরচ হয়ে যেতে পারে। মানসিক প্রস্তুতি থাকলে সামলে নিতে পারবেন।
২১. খরচগুলোর প্রয়োজন বা গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করুন। স্ত্রী বা স্বামীকেও বোঝান। এমন যেন না হয় সন্তুানের জন্মদিনের পার্টিতে ১০ হাজার টাকা খরচ করে বসে আছেন পরে ছেলের স্কুলের টিউশন ফি দিতে পারছেন না।
২২. নিজের আশপাশের লোকদের জীবন-চাহিদা ও সমস্যার প্রতি নজর দিন। স্বপরিবারে সিঙ্গাপুরে শপিংএ গেছেন অথচ হাউস টিউটরের সামান্য টিউশন ফিটা দিয়ে যাননি। অথবা নিজেরা চাইনিজে গিয়ে ৫ হাজার টাকা খরচ করে এসেছেন কিন্তু কাজের মেয়েটা ২ হাজার টাকার জন্য তার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেনা। আমাদের দেশে এসব খুব নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। মনে রাখবেন এগুলো কারো মানবিক মূল্যবোধকেই কেবল ভুলন্ঠিত করছে না, এগুলো সন্তুানকে প্রভাবিত করছে। তাছাড়া এগুলো যত বেশি লোকই করুকনা কেন এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়। এগুলো এক ধরনের মানসিক বৈকল্যতা।
২৩. কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ মানুষকে ভালো থাকতে সাহায্য করে। কাউকে টাকা ধার দিলেন। সে টাকা সে দিতে পারছেনা বা দিচ্ছেনা। যদি এতে কারো বেশি সমস্যা না হয়। তাহলে জিদাজিদি করবেন না মোটেও। তাকে ঠাণ্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করুন সে ধার শোধ করবে কি না বা কখন করবে। তারপর তাকে হয় কর্জে হাসানা করে দিন নয়তো মাফ করে দিন। চাইলে আপনার বার্ষিক যাকাত বা দানের সাথে সমন্বয় করে নিন। যেমন ধরুন কারো যাকাত আসলো ১০ হাজার টাকা এর মধ্যে কেউ একজন কারো কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছে। সে যদি ্ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় আর কারো জন্যও ৫ হাজার টাকা যদি চাপ হয়ে যায়। তাহলে যাকাত ১০ হাজারের পরিবর্তে ৫ হাজার দিন। আর সে ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন যে যাকাতের খাত থেকে তাকে মাফ করে দিয়েছেন।
আসল কথা হলো সদিচ্ছা যদি চাপ না নিয়ে ভালো থাকতে চান তাহলে এরকম হাজারো উপায় আছে। কারো ইচ্ছাই তাকে প্রতিনিয়ত পথ দেখাবে এই লেখা কেবল একটু সূত্র ধরিয়ে দেয়া আর কি।
আশা করি এই পোস্টটি আপনাকে দরকারী কিছু তথ্য দিয়েছে। পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য সাথেই থাকুন! সমাহার ডট নেট-এর পণ্য সামগ্রী ও সেবা পেতে রিসেলার, সেলার সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
You must be logged in to post a comment.