প্রিয় নবী রাসূলে আকরামের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম আল্লাহ প্রদত্ত পাঠানো ওহি হচ্ছে, ইকরা অর্থাৎ পড়ূন। মহান প্রতিপালক রবের নামে পড়ার তাগিদ দেওয়ার মাধ্যমে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিলের সূচনা। পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানার্জন করে। এমনকি ইসলাম জানার জন্যও জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। সূরা মুহাম্মদের ১৯নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘জেনে নাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ এখানে জেনে নাও মানে জ্ঞানার্জন করো। আল্লাহর রাসূল আরও জোর দিয়ে বলছেন, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর ওপর অবশ্য কর্তব্য।
মহান আল্লাহ এ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। পৃথিবীতে আল্লাহর অসংখ্য নির্দেশনাবলি রয়েছে। যেগুলো দেখে সাধারণ চোখে অনেক কিছুই আমাদের বোঝা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন জ্ঞান ও গভীর চিন্তার। অনেক দৃষ্টান্তও আল্লাহ দিয়েছেন। সেগুলো বোঝার জন্য যে জ্ঞান দরকার তা কোরআন বলছে, ‘আর এসব দৃষ্টান্ত আমি মানুষের জন্য পেশ করি আর জ্ঞানী লোকেরা ছাড়া কেউ তা বুঝে না’ (সূরা আল আনকাবুত :৪৩)। আর এ জন্যই তো জ্ঞানী ও মূর্খের মধ্যে পার্থক্য। দুনিয়ার জীবনেও দেখা যায়, যারা নিজেদের জ্ঞানের পথে নিয়োজিত করেছে, পড়েছে, বুঝেছে, বাস্তব জীবনেও তারা ভালো করছে। আর যারা তাতে বেশি গুরুত্ব দেয়নি তাদের জীবনও তেমনি। জানার প্রতি কোরআনের তাগিদও তাই- ‘বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরা আয-যুমার :৯)। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে জ্ঞানী হয়, তার দ্বারাই আল্লাহ অজস্র নেয়ামত অনুধাবন সম্ভব। এর মাধ্যমে আপনিতেই তার মাথা নুইয়ে আসে। আল্লাহকে সে বেশি ভালোবাসতে শেখে। সে কথাই কোরআন বলছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে (সূরা আল ফাতির :২৮)।
ইসলামকে জানতে হলে, জীবনের সব পর্যায়ে দ্বীনকে মানতে হলে জানার বিকল্প নেই। এ জন্য জ্ঞান বা ইলমের ব্যাপারে প্রিয় নবীও বলেছেন। ইলম অন্বেষণ করা এতই মর্যাদাপূর্ণ যে, তালেবে ইলমের জন্য আসমান ও জমিনের সবকিছুই ইস্তেগফার করে, আল্লাহর কাছে ইলম অন্বেষণকারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন :তালেবে ইলমের জন্য জগতের সবকিছুই (আল্লাহতায়ালার দরবারে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মাছও। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে যখন একুশের বইমেলা শুরু হয়, তখন বই পড়ার তাগিদ খুব বেশি দেখা যায়। এটা নিশ্চয়ই ভালো বিষয়। পড়ার মাধ্যমেই মানুষ আলোকিত হয়। তবে দ্বীনের আলোকে আলোকিত হওয়ার মধ্যেই আমাদের সার্থকতা। বইমেলায় প্রতিবছর অনেক বিষয়ের বই প্রকাশ হয়। বই লেখার জ্ঞান মহান আল্লাহর তরফ থেকেই আসে। কারণ আল্লাহতায়ালা সব জ্ঞানের জ্ঞানী। আবার যারা জ্ঞান আহরণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদও দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সা.) বলেছেন, আমার কাছ থেকে একটি আয়াত জানলেও তা অপরের কাছে পেঁৗছে দাও। সে তাগিদ থেকেও অনেকে বই লেখেন। বই লেখা দ্বীন প্রচারেরও একটি অন্যতম মাধ্যম।
ইসলাম দুনিয়াবি জ্ঞানার্জনকেও নাকচ করে দেননি। সমাজে চলতে হলে যেসব জ্ঞান দরকার, সেসব জ্ঞানের মাধ্যমে সভ্য নাগরিক হওয়া যায়, চরিত্রবান হওয়া যায়; এমনকি কারিগরি কিংবা ব্যবসায়িক অনেক জ্ঞানও প্রয়োজন। সে জন্য বই পড়া, জ্ঞান চর্চা হতেই পারে। এক কথায় বলা যায়, উপকারী ও নৈতিক সব জ্ঞানকেই ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে। তবে বলে রাখা প্রয়োজন, সব জ্ঞানের উৎস মহাগ্রন্থ আল কোরআন। পড়ার ক্ষেত্রে কোরআনকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।
You must be logged in to post a comment.