অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে জানুন। নিজের এবং প্রিয়জনের জীবন বাঁচান!

0

একবার চিন্তা করুন তো, আপনি বা আপনার কোন প্রিয়জন হাসপাতালে ভর্তি। অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ সেবন করা প্রয়োজন এবং তা দেয়াও হচ্ছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছেন। ভয়াবহ একটা অবস্থা। তাই নয় কি? নিশ্চয় ভাবছেন কেন এটা হবে বা হলে প্রতিকারই বা কি? সত্যি কথা বলতে এটা হলে কোন প্রতিকার নেই, নিশ্চিত মৃত্যু। এটাই হল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স।

ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস সহ অন্যান্য পরজীবি (মাইক্রোবিয়াল) সময়ের সাথে সাথে অভিযোজিত হয়ে এক পর্যায়ে কোন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধে সাড়া দেয় না – এই ধরনের অবস্থাকেই আসলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বলে। সাধারণ কোন ইনফেকশনও তখন চিকিৎসায় ভাল হয় না, ধীরে ধীরে সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নীরব ঘাতকের মত আমাদের অজান্তেই আমাদের শরীরে এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স মহামারী আকারে বেড়ে চলেছে। আমরা অনেক রোগ নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু এই নীরব ঘাতক নিয়ে একেবারেই সচেতন নয়। এই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতেই এই বছর (২০২০) ১৮ নভেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা “World Antimicrobial Awareness Week” ঘোষণা করেছে, যার প্রতিপাদ্য বিষয় রাখা হয়েছে “Unite to Prevent Drug Resistance”।

 

কেন পৃথিবী ব্যাপী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে?

মানুষ ও গবাদি পশুর শরীরে, কৃষিকাজে যথেচ্ছ এবং অতিরিক্ত ডোজে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধ ব্যাবহার, পরিস্কার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবসহ আরো অনেকগুলো কারণ রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের জন্য।

১। মানুষ, গবাদী পশু এবং গাছে যথেচ্ছ এবং অতিরিক্ত ডোজে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধ ব্যাবহার – এটিই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির মূল কারণ। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে এই অবস্থা প্রকট। অনেক সময় সঠিক এবং নিয়মিত তদারকির অভাবে ডাক্তারেরা (সবাই নন) অপ্রয়োজনে, রোগীর দ্রুত সুস্থতার আশায় অথবা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নীরিক্ষা না করেই অনুমানের ভিত্তিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন। আবার সঠিক ঔষধ প্রেসক্রাইব করলেও দেখা যায় অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের থেকে কম ডোজ দেয়া হয় রোগীকে।

অন্যদিকে রোগীরা অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যেকোন সমস্যায় ইচ্ছামত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধ কিনে সেবন করেন। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধের এই সকল যথেচ্ছ ব্যাবহারের কারণেই দিন দিন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে।

উদাহরণ হিসাবে অ্যান্টিবায়োটিকের কথা বলা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে, কিন্তু ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে না। সিজনাল জ্বর, ঠান্ডা ও কফ ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই মানুষ এই সমস্ত অসুখে ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ খেয়ে থাকে। সিজনাল জ্বর, ঠান্ডা, কফ তাতে ভাল তো হয়ই না, উল্টা তার শরীর অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট হয়ে ওঠে। অনেক সময় অনেক প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ছাড়াই অপ্রয়োজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হয়েছে দেখা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি এবং গবাদি পশুর খামারেও প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা হচ্ছে যা বিভিন্নভাবে আবার মানুষের শরীরে ফিরে আসছে এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরী করছে।

২। মানুষ এবং গবাদি পশুর জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্কার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব – মনুষ্য সমাজে এবং গবাদি পশুর খামারে পরিস্কার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব ইনফেকশন ছড়াতে প্রধান ভূমিকা রাখে আর এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রচুর পরিমানে মানুষ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের শিকার হয়।

৩। কোভিড  ১৯ – “কোভিড – ১৯” এর সময় অনেক মানুষ আতংকিত হয়ে অতিরিক্ত ডোজে  অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহন করে থাকতে যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের হার বাড়িয়ে দিতে পারে। সবার মনে রাখতে হবে কোভিড – ১৯ একটি ভাইরাস জনিত অসুখ। অ্যান্টিবায়োটিক কোভিড – ১৯ প্রতিরোধ করতে পারে না।

 

কিভাবে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স কমানো জেতে পারে?

১। একবারে প্রয়োজন না হলে বা স্বল্প লক্ষণে বা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধের প্রেসক্রিপশন করা বন্ধ করতে হবে।

২। ফার্মেসী থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধের বিক্রয় বন্ধে সরকারে ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি বাড়াতে হবে।

৩। জনগনের মাঝে এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম কমাতে হবে।

৪। গবাদি পশু ও কৃষি খামারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধের ব্যাবহার কমাতে হবে।

৫। জনসাধারণের জন্য পরিস্কার পানির প্রাপ্যতা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের সুবিধা বাড়াতে হবে।

৬। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাবহার করা পানি পরিবেশে উন্মুক্ত করার আগে সঠিকভাবে ফিল্টার করতে হবে যাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ঔষধের অবশিষ্টাংশ পরিবেশ ও পানিতে না মিশতে পারে।

সূত্রঃঃ ডকটাইম

Choose your Reaction!
Leave a Comment
Cart
Your cart is currently empty.